আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: গতকাল শনিবার ৪ জুন দুপুর ১২টায় লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি দোয়ানীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ১২সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষণের কারনে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ২টি রুদ্ধমূর্তি ধারণ করেছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর প্রায় ৫০টি চর ও দ্বীপচরে প্রায় ২৫হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২দশমিক ৭৮সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২দশমিক ৬০সেন্টিমিটার) বিপদসীমার ১৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় পরে কমে ১৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষরা গেল দুই সপ্তাহে তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলায় বন্যা স্থায়ী রুপ নিয়েছে। দুই সপ্তাহে উজানের পাহাড়ী ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা তৃতীয় ধাপে আবারও ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রুপ। তিস্তা ও ধরলা খুবেই খরস্রোতা নদী। নদী ২টির রুপ এখ রুদ্ধমূর্তি। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গণ। ইতোমধ্যে প্রায় ২শত পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ৫টি উপজেলার প্রায় ২৫হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, দূর্গাপুর। লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলাা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
হঠাৎ তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বন্যা চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম, ধানের চারা ও ভূট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে কৃষক। ফসলের ক্ষেত দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ঢুবে থেকে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। সাধারণত তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য। কিন্তু এবারে দুই সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি তৃতীয় দফায় কয়েক দিন ধরে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা পাড়ে নারী শিশু বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনার মধ্যে পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়ায় মহামারির আশংকা দেখা দিয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়ায় শুকনো জায়গা ও চারণ ভূমির অভাবে গবাদি পশুপাখির খাদ্য সংকটে পড়েছে।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। শনিবার ৪ জুলাই) বেলা ১২টায় বিপদসীমার ১৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় শনিবার বিকেলের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে। তিস্তা নদীর নাব্যতা না থাকায় বিপদ সীমা অতিক্রম করলে তিস্তা নদীর দুই কুল উপচে যায়। শুস্ক মৌসুমে নদীর নাব্যতা ফিরাতে ডেজিং করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, বন্যার্থদের সহায়তায় স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সহায়তা পৌচ্ছে দেয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে সহায়তা করা হবে। সরকার দূর্যোগে দেশের মানুষের পাশে আছে। কোন মানুষ না খেয়ে মারা যাবেনা।